শীত এলেই দেশে শুরু হয় হরেক রকমের শাক-সবজি চাষ। এ মৌসুমে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর কৃষকেরা বিদেশি জাতের বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বেশ সু-স্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ার এ জাতের কপি বাজারে চাহিদা দ্বিগুণ। দেশি ফুলকপির চেয়ে এ জাতের কপির দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষকরা জানায়, ‘‘শুরুতে কেও এ জাতের ফুলকপি চাষাবাদে সাহস পায়নি। কৃষি অফিসের পরামর্শে আমরা চাষাবাদ শুরু করি। প্রথম বারেই বাম্পার ফলন আর ভালো দাম পাওয়ায় এখন সবাই খুশি। এখন আমাদের বাহারি রঙের কপির খেত দেখতে লোকজন ভিড় করে। বাজারে রঙিন ফুলকপির চাহিদা ও দাম থাকায় ভালো লাভবান হচ্ছি।’’
কৃষি বিভাগ বলছে, ‘‘রঙিন ফুলকপির মধ্যে রয়েছে বিটা কেরোটিন এবং এন্টি অক্সডিন্টে থাকার কারণে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। মানব শরীরের ক্যান্সার ও হৃদ রোগের ঝুঁকিগুলো অনেকাংশে কমায়। এ জাতের কপি রোপণের ৮০/৮৫ দিনের মধ্যে বিক্রি করা যায়। জমি থেকে তোলা কপি প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।’’
সরেজমিনে গতকাল শনিবার উপজেলার মুশুদ্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হলুদ রঙের কেরটিনা, বেগুনি রঙের ভেলেনটিনা ও সবুজ রঙের (ব্রোকলি) ফুলকপির খেত দেখে মনে হবে এটি কোনো ফুল খেত; কিন্তু তা-নয়। এগুলো হলো বিদেশি জাতের ফুলকপি। প্রতি বছর কৃষকেরা দেশি জাতের কপি চাষ করলেও এবার বিদেশি জাতের কপি চাষ করেছেন। যার ফলনও হয়েছে ভালো। বর্তমান বাজারে দেশি কপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর কৃষকেরা রঙিন ফুলকপি বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। আর ক্রেতারাও আগ্রহ নিয়ে কিনছেন।
মুশুদ্দি এলাকার কৃষক মিলন আহমেদ বলেন, ‘‘কৃষি অফিসের পরামর্শে এই প্রথমবার ১ বিঘা জমিতে বিদেশি জাতের কপি চাষ করেছি। ফলন হয়েছে অনেক ভালো। খরচ কিছুটা বেশি। রঙিন ফুলকপির আকারও বেশ বড়। ক্রেতাদের বাড়তি আগ্রহ থাকায় ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে।’’
একই এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান শিবলি ও ইদ্রিস আলি বলেন, ‘‘১৫ শতক জমিতে বিদেশি জাতের ফুলকপি চাষ করেছি। খেত থেকেই পাইকারা উচ্চ মূল্য দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আমাগীতে অধিক জমিতে চাষ করবো। দাম ভালো থাকায় অন্য কৃষকদের এ জাতের কপি চাষে আগ্রহ বাড়ছে।’’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘‘মুশুদ্দিতে প্রথম রঙিন ফুলকপি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কৃষি অফিস থেকে ফুলকপির চারা, জৈব সার, পোকারোধক কীটনাশক ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা দেওয়া হয়।’’
কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘এ জাতের ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। ক্যান্সার রোধেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে এ ফুলকপি। চলতি মৌসুমে পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা পাওয়ায় অনেক কৃষক আগামী বছরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’’