টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ শুরু হয়। ওই বছরের ১০ জানুয়ারি ডাকা হয়। চারটি নতুন ভবন নির্মাণ এবং পুরনো একতলা ভবন সংস্কারের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোনার প্রকৌশল সংস্থা। ওই বছরের সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেয়া শর্ত অনুযায়ী ১৮ মাসে ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিলের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা সেই কাজ প্রায় ১৮ বছরেও শেষ করেনি ঠিকাদার।
সর্বশেষ ভবনগুলোর নির্মাণকাজ সমাপ্ত করার জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্মতি না দেয়ায় পুনরায় কার্যাদেশ দিতে পারছে না স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
এর আগে কাজ শেষ করার দাবিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সচেতন মহলের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে স্মারকলিপি ও লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। এতেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
দরপত্র অনুযায়ী, ৪ কোটি ৯৬ লাখ ১০ হাজার ৪৪৯ টাকায় দুটি চারতলা, একটি দোতলা ও একটি একতলা ভবন নির্মাণ এবং পুরনো ভবন সংস্কারের কথা ছিল।কাজ চলমান দেখিয়ে ২০০৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৭৭ হাজার ৮২ টাকা তুলে নেন। সে সময় পর্যন্ত ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলেও দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে ৩১ শয্যার বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সালে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ১০ হাজার ৪৪৯ টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু করা হয়। বর্তমানে ৫০ শয্যার নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালটি পরিচালনা করা হচ্ছে। কিছুটা লোকবলের সংকটও রয়েছে। ২৭ চিকিৎসকের পদে কর্মরত ২১ জন। নার্সিং সুপারভাইজার একজন, সহকারী নার্স ২৭, মিডওয়াইফার ছয়জন থাকলেও এদের বসার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। ভালো কক্ষের অভাবে উন্নত যন্ত্রপাতি বসানো যাচ্ছে না। ফলে উপজেলাসহ আশপাশ এলাকা থেকে বহির্বিভাগে প্রতিদিন ছয়-সাতশ রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। ২০০৫ সালে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ছিলেন।প্রভাবশালী লোক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না।
এদিকে পরিত্যক্ত ভবনগুলো বখাটেদের আড্ডাস্থল হয়ে উঠেছে।এছাড়া নতুন ভবনের জন্য বরাদ্দ যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে গুদামে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শার্লী হামিদ বলেন, ‘কাজ শেষ করার বিষয়ে গত বছর জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আমি লিখিত আবেদন করেছি। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, ‘কাজ শেষ করতে নতুন করে বাজেট এসেছে। যেহেতু এখনো সোনার বাংলা কনস্ট্রাকশনের কাছে কাজ রয়ে গেছে সেজন্য নতুন বাজেট পেলেও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এটিকে আধুনিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হিসেবে তৈরির কথা, কিন্তু এনওসি (অনাপত্তিপত্র) না পেলে বাজেট ফেরত যাবে।
বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ‘আসলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে সবাই ভয় পায়। আমি এ বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় তুলে ধরেছি। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে একাধিকবার গিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পরিদর্শন করে গেছেন। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। আমি আবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে যাব। যাতে কাজটা দ্রুত সমাধান হয়।
টাঙ্গাইল স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এটা ২০০৫ সালের বিষয়। আমি এক বছর আগে এখানে আসছি। সার্বিক বিষয় খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়টি অনেক জটিল। ফোনে বলা যাবে না। সময় নিয়ে সামনাসামনি কথা বলতে হবে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি সিরিয়াসলি দেখব। সরকারি অর্থের সম্পূর্ণ সৎ ব্যবহার হয়, কাজটা যেন শেষ হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় যা ব্যবস্থা নিতে হয়, তা আমি করব।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা প্রকৌশল সংস্থার চেয়ারম্যান ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম গতকাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এটা তো ২০ বছর আগের কাজ। এটার আর এখন কোনো অস্তিত্ব নেই।
সুত্র:বণিক বার্তা