এশিয়া কাপ খেলতে বাংলাদেশ জাতীয় (অনুর্দ্ধ-১৯) ক্রিকেট দলের বহরে আরব আমিরাতে যাচ্ছে টাঙ্গাইলের ৩ ক্রিকেটার। এরা হলেন যুব বিশ্বকাপে খেলার জন্য তৈরী হওয়া রিফাত বেগ, দেবাশীষ সরকার ও রিজান হোসেন। অনুর্দ্ধ-১৯ বা যুব বিশ্বকাপের জন্য মেধাবী প্রকল্পে প্রতিশ্রুতিশীল টাঙ্গাইলের ৩ জন ক্রিকেটার বর্তমানে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহন করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে গেছেন।
এশিয়ার আলোচিত শারজাহ মাঠে ২৯ নভেম্বর ভারতের যুব দলের সাথে উদ্বোধনী ম্যাচে অংশগ্রহন করবে বাংলাদেশ যুব দল(অনুর্ধ্ব-১৯)। বাংলাদেশ দলে টাঙ্গাইলের ৩জন ক্রিকেটারই দলের জন্য অপরিহার্য ক্রিকেটার।
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার কামান্য গ্রামে জন্মগ্রহন করা বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিভাবান ক্রিকেটার বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রিফাত বেগ। ১১ ফেব্রæয়ারী রাজশাহী শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে অনুর্ধ্ব-১৮ জাতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ঢাকা মে্েট্রার বিপক্ষে অপরাজিত ট্রিপল সেঞ্চুরী(৩২০) করে ইতিহাস করেছেন। এই পর্যায়ে ক্রিকেটে এটাই বাংলাদেশির সেরা ইনিংস। ৬৫০ মিনিট ক্রিজে থেকে ৪৮৩ বলে ২৯টি চার আর ৪টি ছক্কা হাঁকান।
তার সাথে কথা বলে জানা গেছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অপরিহার্য ক্রিকেটার হওয়াই তার স্বপ্ন। তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ার সময় তারই বড়ভাই বরকতের হাত ধরে ক্রিকেট খেলার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি। তার ধ্যান জ্ঞান ক্রিকেট আর ক্রিকেট।
দেবাশীষ সরকার। বাসাইল উপজেলার ফুলকী ঝনঝনিয়া এলাকার আশিষ সরকারের ছেলে দেবাশীষ সরকার। ছোট বেলা থেকে ক্রিকেট খেলার প্রতি তীব্র আকর্ষণে ফুলকী ছুটিয়ে ঝনঝনাছেন ক্রিকেট মাঠের মনোযোগী অলরাউন্ডার দেবাশীষ সরকার। বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৬ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে ভারত সফর করেছেন। তার নেতৃত্বে ভারতের আঞ্চলিক দলের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচেই বিশাল জয় উপহার দিয়েছেন। দেবাশীষ একজন পরিশ্রমী ও চতুর অফস্পিন বোলার কাম ব্যাটসম্যান। লক্ষ্য তার বাংলাদেশ জাতীয় দলে গ্রহনযোগ্য ক্রিকেটার হওয়া।
রিজান হোসেন একজন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ও উদ্বোধনী বোলার। এটাই তার জন্য এগিয়ে যাওয়ার বড় সম্পদ। ক্রিকেট বিশ্বে বিরল জ্যাক কালিস ও মনোজ প্রভাকর ছিলেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ও উদ্বোধনী বোলার। সে পথে টাঙ্গাইল শহরে জন্ম নেওয়া রিজান হোসেন একজন জেনুইন অলরাউন্ডার। খেলার কথা ছিলো বিগত যুব বিশ্বকাপে। ভারত সফরে আশিকুর রহমান শিবলী ব্যাটিংয়ে খুব ভালো করলে রিজান হোসেন নাম চলে আসে অতিরিক্ত তালিকায়। তবে এরপর থেমে থাকা নয়। এবার বাংলাদেশ যুব দলের গুরুত্বপূর্ন সদস্য হয়েই এশিয়া কাপে খেলতে গেছেন। একটি দুটি নয়, বাংলাদেশ যুব দলে এবার টাঙ্গাইলে হয়ে ৩ জন খেলছেন। যারা দলের গুরুত্বপূর্ন সদস্য। বিগত সময় টাঙ্গাইল জেলার হয়ে আবু নাসের মানিক, প্রয়াত কুন্তল চন্দ্র পাপন, জয়রাজ শেখ ইমন যুব বিশ্বকাপ খেলে অযত্ন আর অবহেলায় হারিয়ে গেলেও রিফাত বেগ, রিজান হোসেন ও দেবাশীষ সরকাররা ৫০ বছরের স্বপ্ন জাতীয় দলের দরজা উম্মুক্ত করবেই। এটা তাদের চিন্তা চেতনা এবং ক্রিকেটের প্রতি গভীর মনোযোগীই বড় প্রমাণ।
বর্তমান ক্রিকেটে বাংলাদেশের পাইপলাইন শক্ত করতে মনোযোগ দিয়েছে বিসিবি। যার অংশ হিসেবে অনুর্ধ্ব-১৯, এইচপি এবং বাংলা টাইগার্স নিয়ে একাধিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে অনুর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেট দল। যাচ্ছে শ্রীলংকা সফরে । এই সফরে লংকানদের বিপক্ষে দুটি তিন দিনের ম্যাচ এবং তিনটি একদিনের ম্যাচে অংশগ্রহন করবে। ২৬ ও ২৮ নভেম্বর একদিনের ম্যাচ এবং ১, ৬ ডিসেম্বর শুরু হবে তিনদিনের ম্যাচ। এই ১৬ সদস্য দলে আছে টাঙ্গাইলের দুই প্রতিভাবান কিশোর আহসানুল হক মাহিম ও আল রাফি। দুই জনই অলরাউন্ডার ক্রিকেটার।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলা বলেন, রিফাত বেগ, দেবাশীষ সরকার ও রিজান হোসেন হলেন সত্যিকার মেধাবী ও দূরন্ত ক্রিকেটার। ওরাই পারবে টাঙ্গাইল জেলার হয়ে প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে যোগ্যতা অর্জন করে। ওরা শুধু অর্জনই করবে না, অপরিহার্য খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় ক্রিকেট দলে টাঙ্গাইলের সুনাম অর্জন করবে। আমি ওদের সাফল্যে গর্বিত হয়ে শুভ কামনা জানাচ্ছি।
জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মোঃ আফাজ উদ্দিন বলেন, এশিয়া কাপ খেলার জন্য যে ৩জন ক্রিকেটার যাচ্ছে। তারা আমার দৃষ্টিতে পরিশ্রমী ও মেধাবী। এরা সামনের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দাপটের সাথে খেলে জাতীয় দলের পক্ষে সুনাম অর্জন করবে। এছাড়া পরবর্তীতে মাহিম ও আল রাফি উঠে আসছে। তারা আরব আমিরাতে খেলতে যাচ্ছে। আমি আশাবাদী এই ৫ ক্রিকেটার নিয়ে। ওদের সাফল্যই টাঙ্গাইল জেলার সুনাম বয়ে আনবে। টাঙ্গাইলবাসীর র্দীঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হবে।