সরকারি নীতিমালা অনুসারে অটো রাইস মিল করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স, শিল্প সনদ, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স, ফুড লাইসেন্স এবং চকিদারি খাজনা রশিদ প্রদান করে অটোরাইস মিল স্থাপন করার কথা এবং আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা ব্যতিরেকে অটো রাইস মিল স্থাপন করার নির্দেশনা থাকলেও টাঙ্গাইলের কালিহাতির কোকডোহরা ইউনিয়েনের পাছ চারান গ্রামে সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই রাজধানী এগ্রো ফুড নামে এক অটোমেটিক রাইস মিলস্ এর নিমার্ণকাজ চলছে। কাজও সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ অনুযায়ী গ্রহনযোগ্য না হওয়া ও সরকারী অফিসে স্বাক্ষর জাল করে আবেদন জমা দেওয়ায় এ মিলের পরিবশে ছাড়পত্রের অনুমোদন আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়।
মিলের রাস্তার ওপাশেই রয়েছে পাছ চারান,নূরাণী ও হাফাজিয়া মাদ্রাসা, নূরাণী জামে মসজিদ, ডা.সাঈদা খান মহিলা কলেজ,পাছ চারান উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও একই গ্রামে আবাসিক এলাকায় প্রায় ৫০০মিটারের মধ্যেই কোন নিয়ম নীতি ছাড়াই অবাধে গড়ে উঠছে মেসার্স সাহা অটোমেটিক রাইস মিলস্,দেশবন্ধু অটোমেটিক রাইস মিলস্,সোনার বাংলা অটোমেটিক রাইস মিলস্, মা অটোমেটিক রাইস মিলস্,ফেয়ার অটোমেটিক রাইস মিলস্ সহ প্রায় ৭-৮টি অটোরাইস মিল। এতে ধোঁয়া, ছাই ও শব্দদূষণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে জনজীবন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সেই সাথে মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি ও পরিবেশ।
রাজধানী এগ্রো ফুড নির্মানাধীন অটো মিল বন্ধের দাবিতে গতবছর ১০ অক্টোবর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক,পরিবেশ অধিদপ্তর,উপজেলা নির্বাহী নিকট লিখিত অভিযোগ করেও নিমার্ণ কাজ বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ ওঠেছে। লিখিত অভিযোগ করেন ডা.সাঈদা খান মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ডা.সাঈদা খান ।
এতেও অভিযোগ রয়েছে মিল মালিক পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহার করা জন্যে ডা.সাঈদা খানের স্বাক্ষর জাল করে অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদন করা হয় পরিবেশ অধিদপ্তরে।
এলাকারবাসীর অভিযোগ কিছু কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছেন অটোরাইস মিল। এর আগে মিল মালিকদের সাথে একাধিকবার সামাজিকভাবে বসা হয়েও কোন লাভ হয়নি। আগ চারানও পাছ চারান নামে দুটি গ্রামে প্রায় ৩ হাজার লোকের বাস। এখানে রয়েছে ২ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মাদ্রার্সা, একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মহিলা কলেজ এগুলোতে প্রায় ৭০০-৮০০ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে। ধোঁয়া, ছাই ও শব্দদূষণে মারাত্মক শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
রায়হানা ফৈরদৌসী খান বলেন সাহা অটোমেটিক রাইস মিলের পাশেই আমার ৪০ শতাংশ জমি প্রায় ১৫-২০ বছর যাবত জমিতে কোন ফসল হয় না। কিছুদিন আগে লেবু চারা রোপন করেছিলাম এতে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে গাছগুলো সব মরে গিয়েছে। জমি এখন পতিত পরে রয়েছে। অটো রাইস মিলের কারণে সব সময় বিকটভাবে শব্দ হতে থাকে। এই অটো রাইস মিল থেকে আসা ছাইয়ের কারণে প্রতি বছর আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কারখানা দুষিত পানির কারণে কারখানার পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন। এমতাবস্থায় অনুরুপ আরেকটি অটো রাইস মিল একই এলাকায় হলে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা দেখা দিবে।
রাজধানী এগ্রো ফুড এর মালিক মো.মোশারফ হোসেন বলেন, এটা কি আবাসিক এলাকা? আমার এখানে আরও তিনটি রাইস মিল রয়েছে। আমরা পরিবেশের ছাড়পএের জন্যে আবেদন জমা দিয়েছি সেটা পেলে তারপর একে এক সব আবেদন জমা দিব।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের এনভায়রমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানের জন্য শব্দের সহনশীল মাত্রা নির্ধারণ করা আছে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শব্দ ৭৫ ডেসিবেল অতিক্রম করলে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে এবং ১২০ ডেসিবল এর উপরে বেদনাদায়ক হয়। তাই আবাসিক কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় কলকারখানা স্থাপন করলে তা শব্দ দূষন ঘটায় এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও কলকারখানার ধোয়া এবং তা থেকে নির্গত ক্ষুদ্রকনা শ্বসনকার্য্যে ব্যাঘাত ঘটায় ও নানা রোগ স্রিস্ট করে।
টাঙ্গাইলের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদুল হক বলেন পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ অনুযায়ী এটা গ্রহণযোগ্য না। কাজেই তাদের যে আবেদন কয়েকদিন আগেই বাতিল করা হয়েছে। এরপরও যদি তারা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজধানী এগ্রো ফুডের যে মালিক যিনি পরিবেশের ছাড়পত্র জন্য আবেদন করেছিল তিনি সরকারী অফিসে জাল স্বাক্ষর দেওয়ার কারণেও তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। তিনি যেটা করেছেন ডা. সাঈদা খানম প্রতিষ্ঠানের সভাপতি তার স্বাক্ষর জাল করে আমাদের এখানে আবেদন জমা দিয়েছিলেন।
পরে প্রতিষ্ঠানের মালিক ডা. সাঈদা খানমকে আমরা চিঠি দেই এর আগে সে আমাদের যে চিঠি দিয়েছিলেন সেটার স্বাক্ষরের সাথে প্রত্যাহারের আবেদনের স্বাক্ষর মিল না পাওয়ায় ঢাকায় যেখান থেকে পরিবেশের ছাড়পত্র দেওয়া হয় সেখান থেকে এ আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়।