নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে এক যুবককে আটক করে মারধরের ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এলাকায় আলোচনা সমালোচনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে গাছের সঙ্গে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় জনরোষের কবলে ফেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নানান প্রশ্ন করছেন এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালও হয়েছিল। আবার কয়েক ঘন্টা পর সেই ভিডিও ফেসবুক থেকে সরিয়েও ফেলেন।
মারধরের শিকার ওই যুবকের নাম সোহেল রানা (৩০)। তিনি ঘাটাইল উপজেলার লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়নের আবদুল হামিদের ছেলে। পেশায় একজন গাড়ী চালক। যুবকের পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পিত ভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে ওই নারীর পরিবার। তাদের ফাঁসানো হচ্ছে বলে যুবকের পরিবারের দাবি।
নেটিজেনরা বলছেন, আইন হাতে তুলে নিয়ে এমন অমানবিক নির্যাতন ও মারধর করা ঠিক হয়নি। অপরাধী হলে প্রচলিত আইনেই বিচার হত। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। এ নিয়ে তীব্র নিন্দাও প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এ ঘটনায় মোবারক হোসেন ফনি নামের একজন মন্তব্যে লিখেছেন, ‘দেশে মাতব্বর বেড়ে এই দশা। আসুন আমরা সামাজিক ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই।’
নজরুল ইসলাম নামে একজন মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘পাপ করলে শাস্তি পাবে কিন্তু গাছে বেঁধে নির্যাতন এটা অমানবিক। আইন আইনের গতিতে চলে আর যে মেয়েটাকে শ্লীলতাহানি করা হলো তার জীবনের কি হবে, তাকে তো জামাইও নিবে না।’
মেহেদী হাসান সিয়াম নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘যদি অপরাধ করেই থাকে তাহলে, তদন্ত সাপেক্ষে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। এইভাবে আইন যারা নিজেরা হাতে তুলে নিয়েছে তারাও অনেক বড় আর বেশী অন্যায় ও অপরাধ করে ফেলেছে।’
মো. সানোয়ার সিকদার নামে অপর আরেকজন মন্তব্যে লিখেছেন, ‘ অপরাধ করলে শাস্তি পাবে। কিন্তু যারা তার মানবাধিকার লুন্ঠিত করেছে তারাও তো অপরাধী। একজন মানুষ হিসাবে তার মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। অপরাধ করলে তার জন্য প্রশাসন রয়েছে, আইন রয়েছে। আইন তো কেউ হাতে তুলে নিতে পারবে না। এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
এছাড়াও নিন্দা জানিয়ে অনেকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক নানান মন্তব্য প্রকাশ করেছেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও কার চাপে সরিয়েছেন– এমন প্রশ্নের উত্তরে ‘মিসটার রবিনথ নামের ওই ফেসবুক ব্যবহারকারি জানান, ‘তেমন কোন চাপে সরাইনি। এভাবে ভিডিওটা ভাইরাল হলে হয়ত ভবিষ্যতে ওই ছেলেটা সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। এই মানবিক দিকে বিবেচনা করেই ডিলিট করেছি।’
এদিকে নারীর দায়ের করা অভিযোগে পুলিশ ওই যুবককে উদ্ধারের পর ওইদিনই জেলে পাঠিয়েছেন। একাধিক বার ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি তারা।
অপরদিকে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানান ওই যুবকের পরিবার। এ বিষয়ে ওই যুবকের বড় ভাই মো. সোলায়মান জানান, একটি চক্রান্ত মূলক ঘটনায় ফাঁসানো হচ্ছে। এতে আমরা চরম নিরাপত্তাহিনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. বিপন খান জানান, আইন হাতে তুলে নেওয়াটাই অপরাধ। যদি কোন অপরাধী অপরাধ করার পর তাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না, এমন মুহুর্তে যেকোন এল্যার্টপার্সন ওই অপরাধীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারবে। এতে প্রচলিত আইনেই তার বিচার হবে। তবে মধ্যযোগীয় কায়দায় মারধর করার কারও অধিকার নেই।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (১১ মে) টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে এক যুবককের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে রাতভর তাকে আটকে রেখে গাছে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ ওঠে। পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিত ভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ ওই যুবকের পরিবারের। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে কয়েক ঘন্টা পর তা আাবার সরিয়ে ফেলা হয়েছে।